NEWS

প্রিন্সিপাল এর বাণী

তাসাউফ এ বাকী বিল্লাহ

চেয়ারম্যান

প্রিয় অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শুভানুধ্যায়ী সুহৃদ,

 

সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

 

আমি এ কথাগুলো বলতে চাই কেবল একজন প্রতিষ্ঠাতা বা চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক, একজন শিক্ষানুরাগী, একজন স্বপ্নবান মানুষ হিসেবে।

 

একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে যে শক্তিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো শিক্ষা। আর সেই শিক্ষার ভিত্তি যতটা জ্ঞানভিত্তিক, ততটাই তা ন্যায়ের পথে, মানবিকতার পথে, মুক্তচিন্তার পথে এবং সামগ্রিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে দেয়। তবে সেই  শিক্ষা শুধু পুঁথিগত জ্ঞানে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা মানবিক মূল্যবোধ, চিন্তার স্বাধীনতা ও দায়িত্ববোধ বিকাশের পথ প্রশস্ত করে। 

 

আমাদের সামনে একটা প্রশ্ন উপস্থিত হয়েছিল, যদিও “It was the white elephant in the room all along” — “আমাদের সন্তানরা কি শুধু পরীক্ষা পাসের জন্যই তৈরি হচ্ছে, নাকি তারা এই মুহূর্তের এবং ভবিষ্যতের আধুনিক পৃথিবীর জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে?” এই প্রশ্নটাই আমাদের ভাবিয়েছে, দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, আবার একই সাথে নতুন একটা কিছু শুরু করার অনুপ্রেরণা এবং সাহসও যুগিয়েছে। এই ভাবনার ফলশ্রুতিতেই আসলে “স্কোপাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ” প্রতিষ্ঠিত। 

 

আমাদের বিদ্যায়তনটির অবস্থান ঢাকার অদূরে, কেরানিগঞ্জে—একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল যেখানে আধুনিক শিক্ষা, নৈতিকতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি প্রতিষ্ঠান সময়ের দাবি ছিল।এ অঞ্চলে একটি আধুনিক, মূল্যবোধভিত্তিক ও সৃজনশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন আমাদের ছিল বহুদিনের। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি—মানসম্পন্ন শিক্ষা পেতে শহরে যেতে হয়, এই ধারণা ভাঙতে হবে। শিক্ষার পরিসর স্থানিক নয়, তাই এখানকার ছেলেমেয়েরাও আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে—এই বিশ্বাসই আমাদের পথ দেখিয়েছে। আপাততঃ আমাদের সামর্থ্যের ঘাটতি আছে, আমরা হয়ত আরো বৃহৎ পরিসরে বা কাঠামোতে আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। তবে,  আপনাদের সহযোগিতায় আমরা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব, এবং অচিরেই আমাদের পরিসর আরো বাড়াতে পারব বলে আশা রাখি।

২০২৪ এর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এবং তাদের জন্য আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি যে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশের প্রবণতা একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শিক্ষার্থীরা শুধু শ্রেণীকক্ষের সীমাবদ্ধতায় আটকে নেই, তারা প্রযুক্তির ব্যবহার, সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই পরিস্থিতিতে, একটি শক্তিশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা এবং জ্ঞানভিত্তিক পরিসর প্রদান করতে পারে। আমাদের বিদ্যালয় এই চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা শিক্ষার্থীদের এমনভাবে তৈরি করতে চাই, যাতে তারা কেবল নিজেদের উন্নয়নে নয়, সমাজের কল্যাণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

বৈশ্বিক মহামারির পরবর্তী সময়ে, যেখানে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, আমাদের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলে এখনো মানসম্মত শিক্ষার অভাব রয়েছে। এমনকি প্রযুক্তি ও আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির সুবিধা থেকেও আমাদের সমাজের বৃহত্তর অংশই বঞ্চিত। এই বিদ্যালয়টি সেই অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি, স্থানীয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারব।

আমরা বিশ্বাস করি, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে শিক্ষার্থীদের শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বরং সমস্যাভিত্তিক চিন্তাভাবনা, নেতৃত্ব, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও মানবিক সহানুভূতিরও প্রয়োজন। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, বরং জীবনের জন্য প্রস্তুত হবে—যারা নিজের ভাষা জানবে, অন্যের মতামতের প্রতি সহনশীল হবে, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে এবং একই সাথে দেশ, সমাজ ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বইয়ের বাইরে গিয়ে ভাবতে শেখে, প্রশ্ন করতে শেখে, নিজেদের চিন্তা প্রকাশ করতে শেখে। তারা যেন গান গায়, ছবি আঁকে, নাটক করে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্ক করে, সহানুভূতিশীল হয়, এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হয়।

 

 

স্কোপাস তাই শুধুই একটি বিদ্যায়তন নয়—এটি একটি চিন্তার চর্চাকেন্দ্র, একটি আলোকিত সমাজ গঠনের প্রকল্প। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশের পাশাপাশি অংশ নেবে বিতর্ক, সাংস্কৃতিক চর্চা, পাঠচক্র, বিজ্ঞান ক্লাব, পরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রমসহ নানান সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে। আমরা চাই তারা বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতা বোঝার সাহস ও সক্ষমতা অর্জন করুক।

 

আমাদের শিক্ষকরা হবেন কেবল পড়ানোর মানুষ না—তারা হবেন একজন মেন্টর, একজন শ্রোতা, একজন বন্ধু। তারা যেমন শিক্ষার্থীদের শেখাবেন, তেমনি নিজেরাও শিখবেন, বদলাবেন, আগাবেন। যারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে নিজেদেরও উন্নত করবেন। পাশাপাশি অভিভাবক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে থাকবে এক নিবিড়, সহমর্মী এবং স্বচ্ছ সম্পর্ক—যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে করবে আরও শক্তিশালী। আমরা বিশ্বাস করি—শিক্ষা শুধু শিখিয়ে দেওয়া নয়, বরং একজন মানুষকে নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দেওয়ার নাম। সেই আলোয় আলোকিত হবে সমাজ, আলোকিত হবে বাংলাদেশ।

 

আমাদের স্বপ্ন বহুদূর হেঁটে যাবার—আমরা খুব শিগগিরই ইংরেজি মাধ্যমে একটি পৃথক শাখা চালু করতে যাচ্ছি, যাতে অভিভাবকদের আরও বেশি সুযোগ ও বিকল্প দেওয়া যায়। পাশাপাশি রয়েছে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা—স্কুলকে কলেজে রূপান্তর, প্রযুক্তি-নির্ভর একাডেমিক সিস্টেম, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচি সংযোজন এবং মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু করা। আমরা এগোচ্ছি ধাপে ধাপে, কিন্তু প্রতিটি ধাপে আমাদের আন্তরিকতা পূর্ণ।

 

আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করবো—শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায় বজায় রেখে নিজেদের সেরা প্রতিভা তুলে ধরো। নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে কঠোর পরিশ্রম করো এবং শিক্ষকদের পরামর্শ গ্রহণ করো। কখনো হতাশ হবে না; প্রতিটি ব্যর্থতা তোমাদের জন্য নতুন শিক্ষা এবং সফলতার সোপান। আমরা তোমাদের কাছ থেকেও শুনতে চাই, শিখতে চাই। আমরা একমূখী শিক্ষায় নয়, বহুমূখী শিক্ষার এক পরিসর গড়ে তুলতে চাই তোমাদের নিয়ে। এই বিদ্যালয় তোমাদের স্বপ্নের ভিত্তি স্থাপন করবে এবং তোমাদের হাত ধরে আমরা গড়ে তুলবো একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ।

 

আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ সকল অভিভাবকের প্রতি, যারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা জানি, সন্তানকে কারো হাতে তুলে দেওয়া মানে নিজের হৃদয়ের একটা অংশ অন্য কারো বিশ্বাসে সঁপে দেওয়া। সেই বিশ্বাস আমরা নষ্ট করব না। সবাইকে এই শিক্ষা-অভিযাত্রায় সাথি হওয়ার আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের সাথে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে একপথে হাঁটি। আসুন, আমরা সবাই মিলে এমন একটা ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি, যেখানে আমাদের সন্তান, প্রতিটি শিক্ষার্থী শুধু ভালো ফলাফল নিয়ে নয়—ভালো মানুষ হয়ে ওঠে। একটা কথা মনে রাখতে অনুরোধ করবো—ভবিষ্যৎ শুধু কাগজে লেখা সিলেবাসে তৈরি হয় না, তা তৈরি হয় আদর্শ, ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে।

 

আমাদের লক্ষ্য - "শিক্ষা, শৃঙ্খলা, এবং মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়।" আমাদের স্বপ্ন - “আগামীর জ্ঞানীদের সুতিকাগার বিনির্মাণ”। আশা করি আমাদের এই পথচলায় আপনাদের সবাইকে আমরা সাথী হিসেবেই পাবো। 

 

 

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সহ,

তাসাউফ এ বাকী বিল্লাহ

চেয়ারম্যান

স্কোপাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ